Popular Posts

Sunday 4 February 2018

ঐতিহ্য ফিরে পাচ্ছে যশোর কালেক্টরেট ভবন

সিনিউজ: পরিত্যক্ত গাড়ি আর আবর্জনায় ভরপুর ভাগাড় সদৃশ দুরবস্থা থেকে অবশেষে মুক্ত হতে চলেছে যশোরের ঐতিহ্য ও ইতিহাস বহনকারী কালেক্টরেট ভবন। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সেস্থলে ভবনের প্রবেশদ্বার নির্ধারণ, কালেক্টরেট চত্বরে ‘ট্রি ম্যানেজমেন্ট’ অর্থাৎ পরিকল্পিত গাছ লাগানো, পুকুরের সৌন্দর্যবৃদ্ধি, পার্ক পুনর্বিন্যাশ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কালেক্টরেট ভবন ঘিরে কালেক্টরেট চত্বরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কেএম মামুন উজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা যশোর। তাই সমৃদ্ধ এ জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য। আর এ ঐতিহ্যের অংশ ৩৬০ দুয়ারি কালেক্টরেট ভবন। তাই কালেক্টরেট এলাকা তার স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। খুব শিগগির কালেক্টরেট চত্বরের নান্দকিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা হবে। তারই অংশ হিসেবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফ উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, মামলার দীর্ঘসূত্রতায় কালেক্টরেট ভবন ও চত্বরে রক্ষিত বিভিন্ন মামলার আলামত দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে সরিয়ে নিতে ১৮ জুলাই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয় থেকে বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। পত্রে বলা হয়, ‘যশোর একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। এ জেলার কালেক্টরেট ভবনটি অবিভক্ত বাংলার প্রথম ও প্রাচীনতম ভবন হিসেবে ইতিহাসখ্যাত। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইতিহাস ও ঐতিহ্য বহনকারী ৩৬০ দুয়ারী কালেক্টরেট ভবন ও চত্বরের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে এবং এ বিষয়ে বহুবিধ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। পত্রে আরও বলা হয়েছে, কালেক্টরেট চত্বরের পূর্বপাশে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে রাখা অসংখ্য প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, মোটরযান খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছে বছরের পর বছর। দীর্ঘদিন ধরে এসব মোটরযান খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় কালেক্টরেট চত্বরের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং বিষাক্ত সাপসহ পোকামাকড়ের উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া সরকারের উন্নয়নের জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করায় বর্তমান জেলা প্রশাসনের কাজের পরিধি অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে; ফলে কালেক্টরেট ভবনে কক্ষের সংকুলান হচ্ছে না। এ ভবনের মালখানা হিসেবে ব্যবহৃত কক্ষের মালামালগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে ধ্বংস অথবা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হলে কক্ষগুলো খালি করা সম্ভব হতো। এতে ঐতিহ্যবাহী কালেক্টরেট ভবনের আদি সৌন্দর্য যেমন ফিরে আসবে তেমনি ভবনের কক্ষ সংকটের সমাধান হবে বলে পত্রে উল্লেখ কারা হয়। উল্লেখ্য, অবিভক্ত বাংলায় যশোরকে জেলা ঘোষণা করা হয় ১৭৮১ সালে। এর অধীনে ছিল খুলনা, ফরিদপুর, পাবনা, নদীয়া ও চব্বিশ পরগণা জেলার বেশিরভাগ এলাকা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজস্ব সংগ্রহ ও ঔপনিবেশিক শাসন বজায় রাখার জন্য প্রশাসনিক সংস্কারের দিকে গুরুত্ব দেয়। ১৭৮৬ সালের ৪ এপ্রিল মি. টিলম্যান হেঙ্কেল যশোর কালেক্টরেট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। তৎকালীন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা তার প্রস্তাবে সাড়া দিলে ১৭৮৬ সালে যশোর কালেক্টরেটের যাত্রা শুরু হয়। মি. টিলম্যানকে যশোর জেলার প্রথম কালেক্টর নিযুক্ত করা হয়। মুড়লির একটি পুরাতন কুঠিবাড়িতে তিনি তার কার্যক্রম শুরু করেন। ১৭৯৩ সালে মুড়লি থেকে কসবায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় সরিয়ে আনা হয়। ১৮০১ সালে যশোর জেলার প্রথম কালেক্টরেট ভবন বর্তমানের স্থানে গড়ে তোলা হয়। ১৮৮৫ সালে বর্তমান ভবনটির একতলা নির্মাণ করা হয়। ৩৬০ দরজার এই ভবন ছিল তৎকালীন বাংলার দীর্ঘতম ভবন।

No comments:

Post a Comment